Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ঘটনাপুঞ্জ

গল্প নয় সত্যি

বিআরডিবি’র সফলতার কাহিনী

 

“শাহিদা এক সংগ্রামী নারী”
 
 
জনাব শাহিদা ইসলাম ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার আড়পাড়া উত্তর পাড়া মহিলা সমিতির একজন সদস্য। তাঁর স্বামীসহ চার জনের পরিবার। তিনি ছিলেন একজন সাধারণ গৃহিনী। অদম্য ইচ্ছা, চেষ্টা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমেও  একজন সাধরণ নারীও যে তাঁর দারিদ্র্যতা দুর করে একজন সফল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হতে পারে তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন জনাব শাহিদা ইসলাম। 
 
ঝিনাইদহ জেলার অন্তর্গত কালীগঞ্জ উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলামের সাথে জনাব শাহিদা ইসলাম এর খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়। ক্ষুদ্র ব্যবসা করে তার স্বামী যে আয় করত তাতে তাদের সংসারে প্রায়ই অভাব-অনটন লেগে থাকত। সুতরাং বাড়তি কিছু আয়ের জন্য তার স্বামী তরিকুল কে প্রায়ই বাইরে থাকতে হত। তারপরও সংসারের অভাব অনটন নিয়ে সুখে-দুখে দিন কাটছিল। কিন্তু নিস্তরঙ্গ জীবনে হঠাৎ ছন্দপতন ঘটে। সংসারের উপার্জনকারী একমাত্র ব্যক্তি তার স্বামী হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে কর্মহীন হয়ে পড়ে। এতে তার আর্থিক অনটন আরও বেড়ে যায়। স্বামীর চিকিৎসা, সংসারের ব্যয় এবং সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ সব মিলিয়ে দিশেহারা অবস্থা। এ সময় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়িত “দরিদ্র মহিলাদের জন্য সমন্বিত পল্লী কর্মসংস্থান সহায়তা প্রকল্প (ইরেসপো)” এর মাঠ সংগঠক পদে কর্মরত রোকসানা ইসলাম এর সাথে আলাপ হয় শাহিদার । ঘোর আমানিশার মধ্যে কিঞ্চিত আশার আলো দেখতে পান তিনি। আর বিলম্ব না করে মাঠ সংগঠকের সহায়তায় কালীগঞ্জ বিআরডিবি অফিসে যোগাযোগ করেন শাহিদা। প্রতিবেশী ২১ জন দরিদ্র, অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিত মহিলা নিয়ে গঠন করেন আড়াপাড়া উত্তর পাড়া মহিলা সমিতি (সমিতির আইডি নং-৪০১৪৩৩-৫০)। উক্ত সমিতিতে জনাব শাহিদা ইসলাম এর সদস্য আইডি নং ৪০১৪৩৩-৫০-১৩। তিনি ঐ দলের ম্যানেজার নিযুক্ত হন। এরপর শাহিদাসহ সমিতির সদস্যরা উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিস, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ কর্তৃক বাস্তবায়িত “দরিদ্র মহিলাদের জন্য সমন্বিত পল্লী কর্মসংস্থান সহায়তা প্রকল্প (ইরেসপো)” এর সহায়তায় ১৫ দিন ব্যাপী হঁস্তশিল্প এর উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ পরবর্তীতে ঋণ সহায়তা হিসাবে সমিতির সদস্যরা যৌথভাবে হস্তশিল্প কাজের বিপরীতে ৪,০০,০০০.০০ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। শাহিদার উদ্যোগে তার নিজ বাড়ীতে তার নের্তৃত্বে ও নির্দেশনায় সমিতির সদস্যরা হঁস্তশিল্পের যেমন থ্রি-পিচ, ওড়না, ফতুয়া, পাঞ্জাবী, কাঁথা, বেড সীটসহ বিভিন্ন রকমের তৈরী পোষাকের উপর হাতের কাজ ও বøক-বাটিক এর কাজ করতে শুরু করেন। তৈরিকৃত হস্ত শিল্পের মালামালসমূহ বিক্রয় করে তারা অনেক লাভবান হয়। এতে তাদের সকলের উৎসাহ আরও রেড়ে যায়। পরবর্তিতে বেগম শাহিদা ইসলাম বানিজ্যিকভাবে হস্ত শিল্প প্রস্তুত ও বিক্রয়ের জন্য ব্যক্তিগতভাবে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ হিসেবে ১,৫০,০০০.০০ টাকা ঋণ গ্রহণ করে নিজ বাড়ীতে গড়ে তুলেছেন হঁস্তশিল্পের ক্ষুদ্র একটা প্রতিষ্ঠান। তার হঁস্তশিল্পের এই ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ২০ থেকে ২৫ জন দরিদ্র মহিলা হঁস্তশিল্পের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। তিনি তৈরীকৃত পোষাক ইরেসপো প্রকল্পের সেলস্ সেন্টারসহ স্থানীয় বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করে থাকেন। এছাড়া জনাব শাহিদা ইসলাম বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান হতে হস্তশিল্পের অর্ডার সংগ্রহ করেন এবং তা সমিতির সদস্য ও অন্যান্য মহিলাদের দিয়ে প্রস্তুতপূর্বক সরবরাহ করে ভালো আয় রোজগার করতে থাকেন। এভাবে সে নিজে একজন সফল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তায় পরিনত হয়েছেন এবং তার সহায়তায় সমিতির অন্য সদস্যরাও আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স¦াবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানে তার মাসিক আয় ৩০,০০০/- টাকা থেকে ৪০,০০০/- টাকা। তার নিজের এবং দলের আদায়যোগ্য ঋণের বিপরীতে আদায়ের হার ১০০% । দলে তার নিজস্ব সঞ্চয় জমার পরিমান ২৪,৫৩৩/- টাকা। বতর্মানে তার ছেলে মেয়েরা ভালোভাবে পড়াশোনা করাতে পারছেন। তিনি বর্তমানে একজন স্বাবলম্বি নারী হওয়ায় সংসারে তার মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়।
   
জনাব শাহিদা ইসলাম কর্তৃক সমিতির অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে হস্তশিল্প কার্যক্রমের স্থির চিত্র
 
পরিবার পরিকল্পনা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সচেতনতা, বাল্য বিবাহ, যৌতুক, মাদকের কুফল ও জঙ্গীবাদ সম্পর্কে শাহিদা নিজে যেমন সচেতন, প্রতিবেশী মহিলাদেরকেও তেমনি সচেতন করে চলেছেন। ইতোমধ্যে প্রতিবেশীদের নিকট আদর্শ ও অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন তিনি। বর্তমানে তার সংসারে অভাব নেই। ছেলে মেয়ে দুটি স্কুলে পড়ছে, ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। আর এজন্য তারা স্বামী স্ত্রী উভয়েই কালীগঞ্জ বিআরডিবি কর্তৃপক্ষের নিকট কৃতজ্ঞ। শাহিদার প্রবল ইচ্ছার কাছে দারিদ্র্য হার মেনেছে। তিনি সত্যিই একজন সংগ্রামী ও সফল নারী।
 
 
(মোঃ কামরুল হাসান)
ই-২৭৬১
উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার
কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ।